নামকরণে কতিপয় লক্ষ্যণীয় দিক



একজন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখা হয়। শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।


১. নাম সুন্দর, মার্জিত, শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ হওয়া প্রয়োজন।

২. আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান তথা আল্লাহর সত্তাবাচক বা গুণবাচক নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে নামকরণ করা ভাল। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে ডাকার সময় যেন আবদ বা অন্য শব্দ যোগ করে ডাকা হয়। শুধু রহমান, রহীম, রাজ্জাক ইত্যাদি গুণবাচক নামে যেন ডাকা না হয়।

৩. নামের আগে কুনিইয়া রাখা যায়। আল্লাহর রাছুল এ ধরনের কুনিইয়া রাখতেন।

৪. মুসলিম শিশুর এমন নাম রাখা উচিত যা শোনার সাথে সাথে বুঝা যায় এটা এক জন মুসলিম শিশুর নাম। অনেক সময় দেখা যায় এমন নাম রাখা হয় যা শুনে বুঝা যায় না এটা কি মুসলিম শিশুর নাম না অন্য কোন ধর্মাবলম্বীর? আবার অনেক সময় ছেলে বা মেয়ের নামের মধ্যে ফারাক করা যায়না।
যেমন কাজল, নিশাত, ময়না, টিংকু, শীতল, রীতা, অভি ইত্যাদি।

৫. যে সকল গুণবাচক নামের হকদার একমাত্র রাসুলে কারীম (সঃ) সে সব নামে কারও নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন খাতামুন্নাবীয়্যীন (সর্বশেষ নবী), সাইয়েদুল মুরসালীন (রাসুলগণের নেতা)।

৬. আল্লাহ পাকের যাতী নামে কারও নামকরণ করা হারাম। শুধু আল্লাহ কারও নাম রাখা জায়েয নাই। অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে খাস এমন কোন নাম কারো সাথে লাগোনো যাবেনা। যেমন মালেকুল মুলক (জগতের বাদশাহ) সুলতানুস সালাতীন (বাদশাহদের বাদশাহ) ইত্যাদি।

৭. ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করাও অধিকাংশ আলেমের মতে নিষিদ্ধ। তাই জিবরীর, ইসরাফীল, আজরাঈল, মীকাঈল ইত্যাদি নামে নামকরণ করা ঠিক নয়।

৮. যে সকল নাম ইসলামের ইতিহাসে খুবই ঘৃণিত সে সকল নামে কোন শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়। যেমন ইবলীশ, শাদ্দাদ, কারুন, ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব প্রভৃতি নাম রাখা উচিত নয়।

৯. যে সব নামে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের অর্থ বুঝা যায় সে ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়, যেমন আচিয়া (বিদ্রোণী)।

১০. শিশুর একটি সুন্দর নাম রাখা ভাল। তবে কোন কারণে একাধিক নাম রাখা যেতে পারে।

১১. কারও নাম যদি অসুন্দর হয়, সে বড় হয়ে গেলেও তার নাম পরিবর্তন করা যায়।

১২.এমন কোন নাম রাখা ঠিক নয় যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও আবদ বা গোলাম হওয়া বুঝায়। যেমন গোলাম মোস্তফা, গোলাম নবী, গোলাম রাসুল, আব্দুন্নবী, আব্দুস শামস ইত্যাদি।

তাহনীক ও আকীকা



সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মিষ্টি জাতীয় কোন নরম খাদ্য কিংবা খেজুর চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের ভিতর দেয়াকেই তাহনীক বলা হয়। তাহনীক করা সুন্নাত। আল্লাহর রাসুল (সঃ) খেজুর দিয়ে তাহনীক করতেন। আমাদের সমাজে মধু দিয়ে তাহনীক করার প্রচলন আছে।

সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর তাহনীক ও নামকরণ করার সাথে সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সন্তানের আকীকা করা। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলে কারীম (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ) ও হোসাইন (রঃ) এর জন্মেও সপ্তম দিনে আকীকা করেছেন।

পুত্র সন্তান হলে দুইটি ছাগি, বকরী বা কোরবানীর গরুর মধ্যে দুই অংশ দেয়া ভাল। ছেলে সন্তান হলে সামর্থ না থাকলে এক অংশ দেয়াও জায়েয আছে। আর মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগি, বকরী বা এক অংশ দিতে হয়।

আকীকার গোশত ফকীর মিসকীনকে, আত্বীয় স্বজনকে দেয়া যায় এবং নিজেও খাওয়া যায়। আর আকীকা সপ্তম দিন করতে না পারলে পরে করলেও চলবে।

আল্লাহর যাতী ও সিফাতী নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দ যোগে শিশুর নামকরন

আল্লাহ তায়ালার অনেকগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে। তিনি সুরা আল-আরাফের ১৮০ নম্বর আয়াতে নিজের গুণগত নামের বর্ণনা দিয়ে বলেন,

আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম রয়েছে। সে নাম গুলোতে তোমরা তাঁকে ডাকো। (আল-আরাফ ১৮০) আলেম গণ আল্লাহ পাকের নামগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।

১.সত্তাবাচক নাম
২. গুণবাচক নাম
আল্লাহর এ সব নামের পুর্বে আবদ শব্দ যোগ করে শিশুর নামকরণ আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে তোমাদের নামগুলোর মধ্যে প্রিয়তম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযি ও আবু দাউদ)

এ ভাবে আল্লাহর অন্যান্য গুণগত নামের আগে আবদ বা অন্য শব্দযোগ করে নাম রাখা ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে আবদ বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর গুণগত নামে কাউকে ডাকা যাবেনা।

যেমন কারো নাম আব্দুর রহমান,আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, আব্দুল মালেক, আতা উররহমান আব্দুর রহীম রাখার পর শুধু রহমান, রহীম, খালেক, মালেক, রাজ্জাক.রব নামে ডাকা ঠিক নয়।

কেননা এ নামগুলোর হকদার হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তবে আল্লাহর এমন কিছু গুণবাচক নাম আছে-যেগুলো আবদ ছাড়াও ডাকা বৈধ। যেমন ওদুদ মানে স্নেহময়। স্নেহের গুণ আল্লাহ ছাড়াও মানুষের মধ্যে আছে। তাই এ নামে মানুষকে ডাকা যায়। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর স্নেহ মমতা আর মানুষের স্নেহ মমতার মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক। আল্লাহর মমতার সাথে মানুষের স্নেহ মমতা তুলনা করার সুযোগ নেই।

 

শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব



এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার নাম রাখতে হয়। সে সময় তার যে নাম রাখা হয় সবাই তাকে সেই নামেই ডাকে। সে ডাক শুনেই সে দুধ পানরত অবস্থায়ও বুঝতে পারে, তাকে ডাকছে। তাই কেউ ডাকলে তার দিকে তাকায়। আর বড় হবার পর এ নামেই সে পরিচিতি লাভ করে।

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর নিজের নাম নিজে রাখতে পারেনা। এটা পিতা মাতা বা আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব। পিতা মাতা বা যারাই নাম রাখবে তাদের উচিত সুন্দর নাম রাখা। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত আছে যে,রাছুল (সঃ) বলেছেন,যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং সাবালক হলে তার বিবাহ দেবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহ না দেবার কারণে গুনাহ হলে সে গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে। (বায়হাকী, হাদীছটি যঈফ)

এ থেকে বুঝা গেল শিশুর সুন্দর নাম রাখা পিতার কর্তব্য। অর্থবোধক, মার্জিত, ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত, সুন্দর নাম রাখলে তা শিশুর জীবনে প্রভাব পড়ে।

অন্য আরেক হাদীসে আছে, আবু দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে, তাই তোমাদের নামগুলি সুন্দর রাখো। ( আবু দাউদ)

এ থেকে বুঝা যায় শিশুর নাম রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুখের বিষয় হচ্ছে মুসলিম সমাজে অনেকেই শিশুর এমন নাম রাখেন যা অর্থবোধক নয়। এবং এই নাম শুনে বুঝা যায়না এটা কোন মুসলিম শিশুর নাম কিনা?

শেরকী আকীদা

আবার অনেককে দেখেছি দীর্ঘ দিন সন্তান না হবার কারণে পীরের দরবারে বা আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে সন্তান ভিক্ষা করতে। এটা সম্পূর্ণ শেরকী আকীদা। কেননা আল্লাহ ছাড়া কারও পক্ষে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেককে দেখেছি দীর্ঘদিন পর সন্তান লাভ করলে এটাকে পীরের দান বলে মনে করতে। তাই তাদের নাম রাখা হতো পীর বখশ বা পীরের দান, খাজা বখশ বা খাজার দান। এ ধরনের নাম রাখাও ঠিক নয়।

এভাবে মুসলমানদের কারো কারো মধ্যে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার বিদ্যমান।


নামকরণে কুসংস্কারের উদাহরণ

বাংলাদেশের মোটামুটি বড় একটা গ্রামে আমার জন্ম হয়। আমি ছোট বেলা গ্রামেই কাটিয়েছি। গ্রামে নামকরণ কেন্দ্রীক অনেক কুসংস্কার প্রত্যক্ষ করেছি। গ্রাম থেকে এসে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েক বছর ছিলাম। অনেক শিক্ষিত লোকদেরকেও দেখেছি, তাঁদের মধ্যে গ্রামের সেই কুসংস্কার বিরাজ করছে।

আমি গ্রামে লক্ষ করেছি যাদের ছেলে বা মেয়ে জন্ম নেয়ার পর পরই মারা যেত, পরবর্তীতে তাদের সন্তান হলে কপালে কালি মেখে দেয়া হতো এবং তাদের অদ্ভুত ধরনের নাম রাখা হতো। যেমন ধুলো, কালো, গজা, পচা ইত্যাদি। এ ধরনের নামকরণের পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ভুত, পেত্নী, জ্বিন এমনকি যমদুতের কুদৃষ্টি এড়ানো। এটা এক ধরনের কুসংস্কার। সকল মানুষের জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাই এ ধরনের কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে শিশুর নামকরণ করা ঠিক নয়।

নামকরণের সময়

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর কখন নামকরণ করা সুন্নাত এ সম্পর্কে আলেমদের কয়েকটি মত আছে। কেউ কেউ বলেছেন শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নামকরণ ও আকীকা করা সুন্নাত।

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান ও হোসাইনের (রাঃ) আকীকা করলেন জন্মের সপ্তম দিনে এবং তাদের দুই জনের নাম রাখলেন। (ইবনে হাব্বান ও আল মুস্তাদরাক)

আর কেউ কেউ মনে করেন শিশুর জন্ম হবার পর পরই তার নামকরণ করা সুন্নাত। তাঁরা হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেন

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি তালহার জন্ম হলে তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি উটকে হাত বুলিয়ে আদর করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কাছে কি খেজুর আছে? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর আমি তাঁকে খেজুর দিলাম। তিনি তা চিবিয়ে নরম করলেন এবং শিশুটির মুখ ফাঁক করে তার মুখের ভিতর ভরে দিলেন, শিশুটি তখন তার মুখ নাড়াতে শুরু করলো। নবী (সঃ) বললেন আনসারদের প্রিয় হচ্ছে খেজুর। পরে তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। (বায়হাকী)

এ থেকে বুঝা যায় শিশু জন্মেও পর পরই তার নাম রাখা যায়।


ভাল ও মন্দ নামের প্রভাব

এক জন শিশুর যে নামই রাখা হোক না কেন তা তার জীবনে প্রভাব ফেলে। ভাল নামের ভাল প্রভাব আর মন্দ নামের খারাপ প্রভাব পড়ে। এক জন শিশু যখন বড় হয় তখন সে নামের অর্থ জানার চেষ্টা করে। মনে করুন এক জন শিশুর নাম সালেহ, যার অর্থ সৎ কাজ কারী। সে যখন কোন খারাপ কাজ করে তাকে যদি বলা হয় তোমার নামের অর্থ হচ্ছে সৎ কাজ কারী। তুমি যে খারাপ কাজ করলে তা কি ঠিক হলো? নিশ্চয়ই এ কথাটি তার মনে রেখাপাত করবে। এভাবে অনেক শিশু নামের কারণে মন্দ কাজ করতে লজ্জা বোধ করে।

যেমন কারো নাম আবদুল্লহ আর্থ আল্লাহর বান্দা/গোলাম কাজেই তার কাজই হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে আল্লাহর গোলামী/এবাদত করা , আর তা না করলে স্বভাবতই সে লজ্যা বোধ করবে /মানুষ লজ্যা দিবে,

রাসুল (সঃ) এর সামনে কোন লোক এলে তিনি তার নাম জিজ্ঞাসা করতেন। কারো নাম সুন্দর হলে তিনি খুশী হতেন। আর কারো নাম অসুন্দর হলে তিনি তা পরিবর্তন করে দিতেন।

এক কাহিনী

মন্দ নামের করুণ পরিণতির এক কাহিনী ইমাম মালেক তাঁর মুয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন।

ইয়্হাইয়া বিন সায়ীদ হতে বর্ণিত আছে যে, উমার ইবনে খাত্তাবের কাছে জুহায়না কবীলার এক ব্যাক্তি এল। তিনি তাকে বললেন, তোমার নাম কি? সে জবাব দিল শিহাব (অগ্নি স্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন: তুমি কার ছেলে? সে উত্তর দিল ইবনে দেরাম (অগ্নি শিখার ছেলে)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? সে বলল, হারাকা (প্রজ্জলন)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তোমার বাসস্থান কোথায়? সে বলল,বাহরুন্নার (অগ্নি গর্ভে)। তিনি সর্বশেষ প্রশ্ন করলেন, কোন অংশে? সে জবাব দিল বিযাতিল লাযা (শিখাময় অংশে)। তখন উমর (রাঃ) তাকে বললেন: যাও তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ তারা ভস্মীভুত হয়েছে। লোকটি তাদের কাছে গিয়ে দেখল সত্যিই তারা সকলে ভস্মীভুত হয়েছে।

উমার (রাঃ) দুরদর্শিতার মাধ্যমে এটা উপলব্ধি করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় মন্দ নাম রাখা ভাল নয়। তাই এক জন শিশু জন্মগ্রহণ করার পর উত্তম নাম তালাশ করা পিতা মাতা বা অভিভাবকদের উচিত।


যেসব নাম রাখা মাকরুহ

এমন শব্দে দিয়ে নাম রাখা যার অনুপস্থিতিকে মানুষ কুলক্ষণ মনে করে। যেমন- কারো নাম যদি হয় রাবাহ (লাভবান)। কেউ যদি রাবাহকে ডাকে, আর রাবাহ বাড়ীতে না-থাকে তখন বাড়ীর লোকদেরকে বলতে হবে রাবাহ বাড়ীতে নেই। এ ধরনের বলাকে সাধারণ মানুষ কুলক্ষণ মনে করে। অনুরূপভাবে আফলাহ (সফলকাম), নাজাহ (সফলতা) ইত্যাদির নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধরনের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। পরবর্তীতে নিষেধ না করে চুপ থেকেছেন।

যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলা সাহাবীর নাম র্বারা (পূন্যবতী) থেকে পরিবর্তন করে তার নাম দেন যয়নব। এবং বলেন: তোমরা আত্মস্তুতি করো না। আল্লাহই জানেন কে পূন্যবান।

দাম্ভিক ও অহংকারী শাসকদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ। শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।

যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষের স্বাভাবিক রুচিবোধ যেসব শব্দকে নাম হিসেবে ঘৃণা করে; ভদ্রতা ও শালীনতার পরিপন্থী কোন শব্দকে নাম বা কুনিয়ত হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।

নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর ফলে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাবচরিত্র নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে তাফাউল (تَفَاؤُلٌ) বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে-তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ।


ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম


আল্লাহর নাম নয় এমন কোনো নামের সাথে

গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম।

যেমন- আব্দুল ওজ্জা =অর্থ =ওজ্জার উপাসক

আব্দুশ শামস=অর্থ =সূর্যের উপাসক

আব্দুল কামার =অর্থ =চন্দ্রের উপাসক

আব্দুল মোত্তালিব =অর্থ =মোত্তালিবের দাস

আব্দুল কালাম =অর্থ =কথার দাস

আব্দুল কাবা =অর্থ =কাবাগৃহের দাস

আব্দুন নবী =অর্থ =নবীর দাস

গোলাম রসূল =অর্থ =রসূলের দাস

গোলাম নবী =অর্থ =নবীর দাস

আব্দুস শামছ =অর্থ =সূর্যের দাস

আব্দুল কামার =অর্থ =চন্দ্রের দাস

আব্দুল আলী=অর্থ =আলীর দাস

আব্দুল হুসাইন =অর্থ =হোসাইনের দাস

আব্দুল আমীর=অর্থ =গর্ভনরের দাস

গোলাম মুহাম্মদ =অর্থ =মুহাম্মদের দাস

গোলাম আবদুল কাদের =অর্থ =আবদুল কাদেরের দাস)

গোলাম মহিউদ্দীন=অর্থ =মহিউদ্দীন এর দাস ইত্যাদি।

তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। আর যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়। এমনকি অনেক সময় আল্লাহর নামকে বিকৃত করে ডাকার প্রবণতাও দেখা যায়। এ বিকৃতির উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহকে হেয় করা তাহলে ব্যক্তির ঈমান থাকবে না। আর এই উদ্দেশ্য না থাকলেও এটি করা অনুচিত।

দুই: অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেবে কুরআন ও হাদীছে আসেনি; বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে), আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেবে কুরআন ও হাদীছে আসেনি)।

তিন: মানুষ যে উপাধির উপযুক্ত নয় অথবা যে নামের মধ্যে মিথ্যাচার রয়েছে অথবা অসার দাবী রয়েছে এমন নাম রাখা হারাম।যেমন- শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) বা মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম বা উপাধি হিসেবে নির্বাচন করা।সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা।একই অর্থবোধক হওয়ার কারণে মহারাজ নাম রাখাকেও হারাম বলা হয়েছে।

চার: যে নামগুলো আল্লাহর জন্য খাস সেসব নামে কোন মাখলুকের নাম রাখা বা কুনিয়ত রাখা হারাম। যেমন- আল্লাহ, আর-রহমান, আল-হাকাম, আল-খালেক ইত্যাদি। তাই এসব নামে কোন মানুষের নাম রাখা সমীচীন নয়।পক্ষান্তরে আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে যেগুলো শুধু আল্লাহর জন্য খাস নয়; বরং সেগুলো আল্লাহর নাম হিসেবেও কুরআন হাদিসে এসেছে এবং মাখলুকের নাম হিসেবেও এসেছে সেসব নাম দিয়ে মাখলুকের নাম রাখা যেতে পারে। কুরআনে এসেছে-

قَالَتِ امْرَأَةُ الْعَزِيزِ

অর্থ- আলআযিযের স্ত্রী বলেছেন”[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫১